থাইরয়েড রোগ কি এবং এর চিকিৎসা

থাইরয়েড রোগটি স্বাভাবিক মনে হলেও একজন থাইরয়েড রোগী বোঝেন এই রোগের কষ্টটা কতখানি। একজন রোগীর ক্ষেত্রে এই রোগটি কতটা কষ্টদায়ক একমাত্র তিনি উপলব্ধি করতে পারেন। একজন মহিলার ক্ষেত্রে থাইরয়েড রোগ বিশেষজ্ঞ আতঙ্কের নাম এই রোগে আক্রান্ত কোন মহিলা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করলেও সে আসলে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। থাইরয়েড রোগ টা হচ্ছে একটি হরমোন জনিত রোগ । আমাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থি আছে সেসব গ্রন্থি থেকে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়। ঠিক তেমনি একটি গ্রন্থি হচ্ছে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড। সিটি গলার সামনে দিকে থাকে প্রজাপতির মত একটি গ্ল্যান্ড থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়। যেটা রক্তের মাধ্যমে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম সাধন করে। Read in English

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই থাইরয়েড হরমোন সমস্যা বলতে আমরা কি বুঝি?

থাইরয়েড হরমোন কমে গেল নাকি বেড়ে গেল?

এই থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে আমরা এটাকে বলে হাইপোথাইরয়েডিজম যেটি এক ধরনের সমস্যা আবার এই হরমোন টা যদি বেড়ে যায় তাহলে আমরা এটাকে বলি হাইপার থাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড টক্সিকোসিস। এটি ও এক ধরনের সমস্যা।

এখন আসুন জেনে নেই থাইরয়েড  হরমোন কমে গেলে কি কি সমস্যা হতে পারেঃ ওজন বৃদ্ধি পায়, শরীর দুর্বল লাগে, অধিক ঘুম পায়, কোন কাজ করতে গেলে সেটা ভুলে যায়, চুল পড়ে যায়, আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় মাসিকের সমস্যা অর্থাৎ মাসিক বেশি হয় বা বন্ধ হয়ে থাকে।

থাইরয়েড এর চিকিৎসা

হাইপোথাইরয়েডিজম রোগের রোগী বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। যেমনঃ বাচ্চাদের এক রকম চিকিৎসা দেওয়া হয় অথবা মধ্য বয়স্ক দের অন্যরকম এবং অধিক বয়স্কদের অন্যরকম এবং বাচ্চাদের তুলনায় অন্য চিকিৎসা দেয়া হয়। এবং কোন গর্ভবতী মহিলা যদি এ রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে এটা বলে দিতে হবে যে বাচ্চা হওয়ার পর তাকে কোন হরমোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে তারা আপনাকে বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন সাজেস্ট করে থাকেন, যেমনঃ থাইরক্স, থাইরিন, থাইরোলার ইত্যাদি। আবার এই ওষুধগুলো খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। অনেকেই দেখা যায় মেডিসিন গুলো নেওয়ার পরে অফিসে চলে যায় বা যেকোনো কাজে ব্যাস্ত হয়ে যায় কিন্তু এটা ঠিক না। ওষুধগুলো খাওয়ার পরে কমপক্ষে ২ ঘন্টা গ্যাপ দিতে হবে. খাওয়া-দাওয়া বা অন্যান্য ওষুধ খাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকের পক্ষেই সকালে ওষুধটা খেয়ে ২ ঘন্টা বিরতি দেওয়া সম্ভব হয় না । সে ক্ষেত্রে ডাক্তারগন তাদের সকালের নামাজের পরে অথবা রাতে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।  রাতের তারা ওষুধটা খাবার পর দু’ঘণ্টা বিরতি দিয়ে খাবার বা অন্য যে কোন কাজ করতে পারেন।

কেন ওষুধটা খাওয়ার পর দুই ঘণ্টা বিরতি দিতে হবে??

কেননা অনেক খাবার বা অনেক ধরনের মেডিসিন আছে যেগুলো এই হাইপোথাইরয়েডিজম এর ওষুধের কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে পারে। তাই হাইপোথাইরিজম ওষুধ খাওয়ার পর ২ঘন্টা কোন খাবার বা কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না। আবার অনেকেই প্রশ্ন করে যে এই ধরনের রোগের ঔষধ একবার শুরু করলে কি সারাজীবন খেতে হবে নাকি বাদ দিলেও চলবে?

সে ক্ষেত্রে আপনারা আপনাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। দেখা যায় অনেকের ক্ষেত্রে ওষুধটা সারা জীবন খেতে হয় আবার অনেকের ক্ষেত্রে সেটা না খেলেও চলে। সাময়িক কিছু সময়ের জন্য খেলে হয়।

হাইপার থাইরয়েডিজম বা টক্সিকোসিস

এরকম ক্ষেত্রে যেটা হয় সেটা হল হরমোনের আধিক্য বেড়ে যায় অর্থাৎ হরমোন বৃদ্ধি পায়। এই রোগের লক্ষণঃঅস্থির লাগা, বুক ধড়ফড় করা, হাত পায়ের তালু অতিরিক্ত ঘামে, ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, অতিরিক্ত খাওয়ার পরও ওজন কমা, চুল পড়ে যাওয়া, এবং মাসিক অনিয়মিত হওয়া।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে থাইরয়েড এর ঔষধ টা কত দিন খেতে হবে? সে ক্ষেত্রে আমরা বলবো- এই ধরনের রোগে সাধারণত দুই বছর টানা ওষুধ খেতে হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় দুই বছর ওষুধ খাওয়ার পরেও রোগটা পুনরায় দেখা দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আপনাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এই থাইরয়েড হরমোনের পরিবর্তনের ফলে দেখা যায় আমাদের জীবনযাত্রা অনেক সমস্যা হতে পারে। এজন্য আমাদের সকলেরই একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত এবং পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করলে একটি সুস্থ সবল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব।

Start a Conversation

Your email address will not be published. Required fields are marked *