গ্যাস্ট্রিকের কিছু চিকিৎসা যা এই মুহূর্ত থেকে শুরু করতে পারেন

কিছু খেতে পারিনা, শুধু বুক জ্বালাপোড়া করে, গ্যাস্ট্রিক হয়।

এর সমাধান কি?

কেন সমস্যাটা হয় সেটা দিয়ে শুরু করিঃ

আমরা যখন কোন খাবার খায় তখন সেটা পাকস্থলীতে যায়। পাকস্থলী কিছু এসিড এবং আরো কিছু তৈরি করে খাবার হজম করার জন্য। এসিড আর খাওয়ার দুটোই পাকস্থলী থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে, যখনই এসিড নিচের দিকে না গিয়ে উপরের দিকে গলার দিকে উঠে আসে তখন আমরা বুকে জ্বালা পোড়া অনুভব করি। আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাস আমরা কিছুটা পরিবর্তন করলে কিন্তু নিজে নিজে এই সমস্যাটা পরিবর্তন করতে পারব। Read in English

গ্যাস্ট্রিক থেকে কিভাবে বাচবেন

১. একেবারে পেট ভরে খেলে এ সমস্যা বেশি হয়। তাই একবারে বেশি খাবার খাবেন না সারাদিনে ভাগ ভাগ করে বারে বারে অল্প অল্প করে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। একটু বুঝিয়ে বলি বেশি খেলে পাকস্থলী টা ভরে ওঠে, উদাহরণস্বরূপঃ আমরা একটা বেলুনের কথা চিন্তা করতে পারি বাতাস দিলে যেমন একটা বেলুন ফুলে ওঠে, তেমনি পাকস্থলীতে খাবার গেলে পাকস্থলী টাও ফুলতে থাকে। একবারে বেশি খাবার খেলে পাকস্থলীতে ফুলতে থাকে এবং পাকস্থলী ভিতরে থাকা এসিডগুলো উপরের দিকে উঠে আসতে থাকে। যার ফলে বুকে জ্বালা পোড়া শুরু হতে পারে।

২. খাবারের সময় অনিয়ম করবেন না। সময় মত খাবার না খেলে পাকস্থলীতে আর একটা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। রোগটির নাম গ্যাসট্রাইটিস। এ রোগে পাকস্থলীর ক্ষত দেখা দেয়, ইনফেকশন ও হতে পারে। আর এই রোগে আপনার পেটে জ্বালাপোড়া হতে পারে আপনার পক্ষে তো বোঝা সম্ভব না যে পেটে জ্বালাপোড়া কোন কারনে হচ্ছে। তাই পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে আপনাকে নিয়ম করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৩. অনেকের মাঝে একটা ধারণা আছে যাদের গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা তাদের দুনিয়ার প্রায় সব খাবারই নিষেধ। শুধুমাত্র সিদ্ধ, যাও, মসলা ছাড়া খাবার খেতে হবে। এই ধারণাটা কিন্তু ঠিক নয়। এখন প্রশ্ন হতে পারে তাহলে সঠিক টা কি? এক একজনের জন্য একেক ধরনের খাবারে সমস্যা সৃষ্টি করে যেসব খাবার খেলে আপনার বুকের জ্বালাপোড়া করে আপনি শুধু সেই সব খাবার এড়িয়ে চলবেন। সেটা হতে পারে অতিরিক্ত মসলা দেওয়া, তেল দেওয়া, আপনার পছন্দের চপ- পুরি, চটপটি -ফুচকা, এমনকি ডাল ভাত। আপনার কোন খাবারে সমস্যা সেটা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং এড়িয়ে চলতে হবে।

৪. রাতের খাবারটা যথাসম্ভব আগেই সেরে ফেলবেন ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ধরুন আপনি যদি ১১ টায় ঘুমাতে যান তাহলে কমপক্ষে সাড়ে সাতটার মধ্যে খাবার টাই শেষ করে ফেলবেন। অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে এটা কেন করবেন?? ভরা পেটে চিৎ হয়ে শুলে পাকস্থলী থেকে এসিড উপরে উঠে আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তিন-চার ঘণ্টা না খেয়ে থাকা একটু কষ্টকর তবুও এটা এড়িয়ে চলবেন।

৫.বিছানা থেকে সবসময় মাথা এবং বুক ১০-২০ সেন্টিমিটার উঁচুতে রাখবেন মাজার তুলনায় এটা পাকস্থলীর এসিড উপরে ওঠা থামাবে। বালিশ নিয়ে উঁচু করবেন না এতে শুধু আপনার মাথা উঁচু হবে বরং খাটের নিচে বা তোষকের নিচে উচু করে দিবেন যেন আপনার মাথা এবং বুক উঁচুতে থাকে যাদের রাতের মধ্যে জ্বালাপোড়া খুব বেশি হয় তাদের জন্য এই ধাপটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। খেয়াল করবেন ঘুমানোর সময় দেহের ভঙ্গিটা যেন স্বাভাবিক থাকে। আঁকাবাঁকা হলে শরীর ব্যথা হবে বালিশ বা বালিশ এর উচ্চতা পরিবর্তন করলে অনেকেই ঘাড়ে ব্যথা হয়।

৬. এবার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলব, আপনার বুকের জ্বালাপোড়া কমানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে আপনার ওজন যদি বেশি হয় তাহলে সেটা কমানোর চেষ্টা করুন। ওজন অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে ডায়াবেটিকস, হার্টের রোগ, অনেক কিছুই অতিরিক্ত ওজনের ফলে হয়ে থাকে তাই ওজন কমিয়ে ফেলা এবং কমেন্টের পর সেটা ধরিয়ে রাখাই শ্রেয় এবং আপনার অতিরিক্ত বুক জ্বালাপোড়া সমস্যার সমাধান নয় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

৭. ধূমপান বন্ধ করতে হবে। একটা গবেষণা থেকে দেখা গেছে যারা ধূমপান বন্ধ করে ফেলেছে বা কমিয়ে ফেলেছে তাদের ক্ষেত্রে এ গ্যাস্ট্রিকের পরিমাণ প্রায় নেই বললেই চলে। আর ধূমপানও নানা রোগের কারণ তাই এই অভ্যাসটা ও পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।

৮. যদি অনেকে টেনশন এ থাকেন সেখান থেকে এমনটা হতে পারে। এটা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আর নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ আছে যেগুলো এ সমস্যা তৈরি করতে পারে যেমন- অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রফেন ইত্যাদি। তবে আপনি যদি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই ওষুধগুলো খান তাহলে কখনোই নিজে নিজে এই ওষুধগুলো বন্ধ করবেন না ।আপনার ডাক্তারকে জানান যে ওষুধগুলো নেওয়ার পর থেকে আপনার জ্বালাপোড়া আরো বেড়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে ওষুধ গুলো বদলে দিতে পারে বা জ্বালাপোড়ার জন্য অন্য ঔষধ দিতে পারে।

এতক্ষণ বললাম জীবনাচরণে পরিবর্তন আনার কথা। তবে সবার গ্যাস্ট্রিক একই হবে না যে জীবনাচরণে পরিবর্তন আনলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ওষুধের সাহায্য দরকার হতেই পারে তবে ওষুধের পাশাপাশি এই ধাপ গুলো মেনে চলতে হবে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

এখন বলে দিচ্ছি কোন কোন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। যদি বারবার এ সমস্যা দেখা দেয় প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় এবং তিন সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিনই দেখা দেয় এবং বয়স যদি ৫৫ বা তার বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। আর কিছু সমস্যা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এগুলো দেখা দিলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হব।  এগুলোকে বলে অ্যালার্জেন টোন, অর্থাৎ এগুলো দেখা দিলে অন্য কোন ভৌত রূপ হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে। চিকিৎসক সেগুলো যাচাই করবে তবে লক্ষণগুলো আপনাকে মনে রাখতে হবে যেন প্রয়োজনে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

ছয়টা লক্ষণ আছে আসুন জেনে নেই লক্ষণ গুলো কি কি

১. ওজন অনেক কমে যাচ্ছে কোনো চেষ্টা ছাড়াই কোন কারন ছাড়াই।

২.খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে গলায় আটকে যাচ্ছে।

৩. বারবার বমি হচ্ছে।

৪. বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত যাচ্ছে, পায়খানা কালো হচ্ছে এবং বমির সাথে কফের মত কিছু গুটি দেখা যাচ্ছে কফের দানাগুলো হলো জমে থাকা রক্ত।

৫. মনে হচ্ছে পেটে চাকার মত কিছু হয়েছে।

৬. আয়রনের অভাব জনিত রক্তশূন্যতায় ভুগছেন।

এসব লক্ষণ দেখা দেওয়া মানেই গুরুতর কিছু হয়েছে তেমন না, তবে একটা সম্ভাবনা আছে তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন আর হঠাৎ করে পেটে যদি গুরুতর ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে হাসপাতালে যাবেন।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাটাকে আমরা যতটা সহজ মনে করি আসলে ততটা সহজ বিষয় নয়। গ্যাস্ট্রিকের কারণে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই উপরে বর্ণিত চিকিৎসাগুলো আজ থেকেই শুরু করে দিন। কেননা সুস্থ দেহে সুস্থ মন বেঁচে থাকে আজীবন। মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দৈনন্দিনের নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু হতো তাই সঠিক নিয়ম মত চলাফেরা করলে অবশ্যই এর থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। এবং সুস্থ-সবল জীবন অতিবাহিত করা সম্ভব।

Start a Conversation

Your email address will not be published. Required fields are marked *