বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ হয়ে নিয়োগ পেয়েছেন জেমি সিডন্স। পুনরায় বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ এর দায়িত্ব পেয়ে জেমি সিডন্স খুবই উচ্ছ্বসিত। পুরনো জায়গায় ফিরে আসতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত। তবে তার পুরনো কাজের জায়গায় এবার মিলবে নতুন এক বাংলাদেশ দলের, নতুন মুখ এবং সকল নতুন ক্রিকেটার। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া থেকে আসার আগে তিনি তাঁর আনন্দের কথা জানিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটারদের সাথে কাজ করার জন্য অধীর অপেক্ষার কথা। Read in English
বাংলাদেশী এসেই যেন তিনি এক নতুন দলের দেখা পেলেন। আফগানিস্তানের সাথে প্রথম ওয়ানডেতে মিরাজ এবং আফিফের ব্যাটিং দেখে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত। বলেছেন এমন ব্যাটিং তিনি অনেকদিন দেখেননি। বিপিএল চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে আসলে ও করোনাই আক্রান্ত হওয়ার কারণে অপেক্ষা দীর্ঘ হয়েছে। তবে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের মধ্যকার প্রথম ওয়ানডের আগেই শুরু করেছেন তার কাজ। জানিয়েছেন তার দারুণ অভিজ্ঞতার কথা। চট্টগ্রামে তিনি দেখেছেন তার নতুন ছাত্র দের, কাজ করেছেন পুরনো দের সাথে ও।
আফিফ ও মেহেদীর বীরত্ব
জেমি সিডন্স বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাটিং কোচিং শুরু করার পরই আফিফ এবং মিরাজের ব্যাটিং দেখে তিনি খুবই আনন্দিত হয়েছেন। এই দুই তরুণ ক্রিকেটার এর ব্যাটিং দেখে অবাক হয়েছেন তিনি। মেহেদী হাসান মিরাজ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হয়ে অভিষিক্ত হন। এরইমধ্যে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলে ফেলেছেন ৩১ টি টেস্ট, ৫৩ টি ওয়ানডে এবং ১৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
বাংলাদেশ দলের হয়ে আফিফ হোসেনের অভিষেক ঘটে ২০১৮ সালে। এর মধ্যে তিনি খেলেছেন ৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ এবং ৩৯ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। মেহেদী হাসান মিরাজ এবং আফিফ হোসেন ধ্রুব বাংলাদেশ দলের হয়ে অনেকগুলো ম্যাচ খেলা ফেললেও বয়সে এখনো তারা তরুণ। তেমনি ভাবে জেমি সিডন্সের কাছে তারা নতুন ছাত্র এবং নতুন মুখ।
গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে মেহেদী হাসান মিরাজ এবং আফিফ হোসেন এর বিরচিত ব্যাটিং এর ফলেই বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে। উভয় করেছেন সপ্তম উইকেটে ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা পার্টনারশিপ। ২১৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দল যখন ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে তখন কে ভেবেছিল এই ম্যাচ বাংলাদেশ জিতে যাবে। ঠিক তখনই শুরু হয়েছিল নতুন এক ইতিহাসের। আফিফ এবং মেহেদী উভয় ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ম্যাচ জিতিয়েছে।
দারুন পার্টনারশিপ এ কাল দলকে জিতিয়েছেন আফিফ-মিরাজ জুটি
গতকাল আফিফ ও মিরাজ ১৭৪ রানের অপরাজিত পার্টনারশিপ করেছে। শেষ পর্যন্ত মেহেদী হাসান মিরাজের ১২০ বলে ৮১ এবং আফিফ হোসেনের ১১৫ বলে ৯১ রানের অপরাজিত ইনিংস বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে নেয়।
বাংলাদেশের দুই তরুণ ক্রিকেটার এর ব্যাটিং দেখে অন্য সবার মতো অবাক হয়েছেন জেমি সিডন্স। ড্রেসিং রুমে বসে দেখেছেন পুরো ম্যাচ টি। আফিফ এবং মেহেদী হাসান মিরাজ যখন এক এক করে রান করছিল তখন যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক ইতিহাস লেখা হচ্ছিল। দুইজনের খেলা দেখে রোমাঞ্চিত জেমি সিডন্স বলেন “ একই সাথে দুই ব্যাটসম্যানের এত সুন্দর ব্যাটিং অনেকদিন পর দেখলাম। ওরকম কঠিন একটা সময় কত সুন্দর করে তারা ব্যাটিং করল। অনেকদিন পরে এমন কিছু দেখলাম।“
জেমি সিডন্স এর কোচিং
আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ কাল যা করল তা ইতিহাসে তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারিয়ে ও সপ্তম উইকেটে ১৭৪ রানের পার্টনারশিপ এককথায় অবিশ্বাস্য। ম্যাচের এমন ক্রান্তিলগ্নে এসে কোন দলই সপ্তম উইকেটে এত বড় পার্টনারশিপ কখনোই করতে পারেনি।
চট্টগ্রামে প্রথম ওয়ানডের আগে ব্যাটার দের সাথে শুধু মাত্র একদিনের প্র্যাকটিস করার সুযোগ পেয়েছিলেন জেমি সিডন্স। একদিনে নতুন ছাত্র দের আর কতটুকুই বা চেনা যায়। তাই জেমি সিডন্স মূলত বাংলাদেশের ব্যাটিং এর সাথে পরিচিত হয়েছেন গত কালকের ম্যাচে। জেমি সিডন্সের পুরনো ছাত্র ডাব্বা সিনিয়র ক্রিকেটাররা যেখানে অসফল হয়েছিলেন সেখানেই নতুন দুই তরুণ ক্রিকেটার এক আশার আলো দেখিয়েছেন।
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে আসা জেমি সিডন্সের যাত্রা শুরু হলো এক অসম্ভব জয় দিয়েই। এদিন পুরনো ছাত্ররা ভালো না করতে পারলেও আশার আলো দেখিয়েছেন আফিফ হোসেন এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। আশা করা যায় বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা এখন থেকে এভাবেই দেশের জন্য ম্যাচ জেতাবে। জেমি সিডন্সের কাজ শুরু হবে মূলত তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়েই। নতুনভাবে ব্যাটিং কোচ হয়ে আসা এই শিক্ষকের প্রথম ম্যাচ জয় দিয়ে শুরু হওয়ায় তিনি একটু বেশি খুশি।