শবে কদরের ফজিলত, দোয়া ও আমল

প্রত্যেক মুসলমানের কাছে পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। এই রমজান মাসের মধ্যে এমন একটি রাত হয়েছে যা হাজার বছরের চেয়েও উত্তম। আর সেই মর্যাদাপূর্ণ রাতের নাম হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাত। হাদীসে এবং কুরআনে বলা হয়েছে অন্য সময় ১০০০ বছর ইবাদত করলে একজন মুমিন ব্যক্তির জন্য সওয়াব পাবে ঠিক ততটুকুই পাবে লাইলাতুল কদরের রাতের ইবাদত করলে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রাত অতিগুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাত হাজার বছরের চেয়ে উত্তম। আল্লাহ এই রাতে সকল বান্দাদের ক্ষমা করে থাকেন, তারা যা চান তাই দিয়ে থাকেন। আমরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের লাইলাতুল কদর শবে কদরের রাত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সমূহ আলোচনা করব।  লাইলাতুল কদরের করণীয় কাজ সমূহ এবং এই রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের আজকে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। Read in English

লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের গুরুত্ব

আমরা সকলেই জানি সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ৪০ বছর বয়সে কুরআন নাযিল শুরু হয় এবং ২৩ বছর জুড়েই কুরআন নাযিল সম্পন্ন হয়। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে রমজান মাসের তৃতীয় দশকের কোন এক বিজোড় রাতে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় রাসুল কেউ এ বিষয়ে স্মৃতি ভুলিয়ে দিয়েছেন। সকলে ২৭ রমজানের রাতকে লাইলাতুল কদরের রাত হিসেবে চিহ্নিত করলেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য সঠিক নয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেন ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি এই মহামান্বিত রাতে। আর মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে তুমি কি জানো? মহিমান্বিত রাত হল হাজার মাসের চেয়েও উত্তম একটি রাত।’ সূরা কদর: আয়াত(১-৩)

অর্থাৎ লায়লাতুল কদর বা শবে কদরের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটা মুসলমানের উচিত রমজান মাসের তৃতীয় এবং শেষ দশকের প্রতিটি রাতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করা।

লাইলাতুল কদরের দোয়া

আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অতি প্রিয় বান্দা এবং রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা) আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের দোয়া শিখিয়ে গেছেন। কদরের রাত্রে অবশ্যই এই দোয়াটি অধিক হারে পাঠ করতে হবে। লাইলাতুল কদরের দোয়া টি নিচে উল্লেখ করা হলো-

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’

অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)

رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন।’

অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)

رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’

অর্থ : ‘(হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৬)

শবে কদর ২০২২ কত তারিখে?

রমজান মাস শুরু হলেই সবার মনে একটি প্রশ্ন থাকে শবে কদর কবে অনুষ্ঠিত হবে। তবে আমরা আগেই বলেছি যে শবে কদর সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানেন না। তাই এ বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদান করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের সকলের উচিত শেষ দশকে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ এবং ২৯ রমজানের রাতে শবে কদরের তালাশ করা। এই রাতগুলো আল্লাহর ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটানো। যদি আমরা লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান পড়তে পারি তাহলে হাজার বছর ধরে ইবাদত করার যেসব তা আমরা পেয়ে যাব।

শবে কদরের আমল সমূহ

শবে কদরের রাতে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির আজকার করা উচিত। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া উচিত। এবং বেশি বেশি কুরআন পাঠ করতে হবে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো নামাজ। তাই শবে কদরের রাতে প্রত্যেক মুসলিমের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে এসে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সালাত আদায় করা। এক্ষেত্রে অন্যান্য নফল সালাতের মতোই দুই রাকাত করে সালাত আদায় করা যাবে।

এবং প্রতি দুই রাকাত অথবা চার রাকাত সালাত এর মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় বিভিন্ন দোয়া, কুরআন তেলাওয়াত ছাড়াও বিভিন্ন আমল করা যেতে পারে। তবে সবকিছুই হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়।

শবে কদর বা লাইলাতুল কদরের দোয়া ও আমল

শবে কদরের রাত হল রহমত পূর্ণ একটি রাত। রাতে আমল করার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। একজন মুসলিম যত বেশী আমল করবে আলো ততবেশি তাকে প্রদান করবে। এ রাত উপলক্ষে কমপক্ষে 100 বার দরুদ শরীফ সহ ছোট ছোট অনেক দোয়া রয়েছে যেগুলো পাঠ করা উচিত। শবে কদরের রাত আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয় একটি রাত। এই রাতে আল্লাহর বেশি বেশি গুনোগান করা উচিত। এই রাত গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার রাত। কারণ এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। হাজার বছরের চেয়েও উত্তম রাত হিসেবে শবে কদরের রাত কে অভিহিত করা হয়।

শবে কদর বা লাইলাতুল কদর এর এর রাতে নিম্নোক্ত দোয়া গুলো পাঠ করতে হবে। এবং আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

শবে কদরের ফজিলত ও আমল

আমরা সবাই জানি যে শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হচ্ছে ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। এই রাতে আল্লাহপাকের বর্ষ আল কোরআন নাজিল করেছেন। এই রাতে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। এই রাতের ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। এই রাত আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। এবং তার প্রিয় বান্দাদের এই রাতের বদৌলতে ক্ষমা করে থাকেন।

এই রাতে অবশ্যই একজন মুসলিমকে নিম্নোক্ত আমলগুলো বেশি বেশি করতে হবে।

  • বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করা
  • বেশি করে দরুদ পাঠ করা
  • তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া
  • শবে কদরের জন্য যে দোয়া গুলো রয়েছে সেগুলো বেশি করে পাঠ করা
  • রমজান মাসের শেষ দশকে বেশি বেশি দান সদকা করা
  • অধিক পরিমাণে কোরআন পাঠ করা। বিশেষ করে সূরা আল কদর, সূরা আর রহমান, সূরা তোহা, সূরা ইয়াসিন ইত্যাদি বেশি করে পাঠ করা।
  • এড়াতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা।
  • রমজান মাসে অধিক সওয়াবের আশায় প্রত্যেকদিন একজন ব্যক্তিকে ইফতার করানো।

লাইলাতুল কদর অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে আমাদের উচিত এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা। কিভাবে ইবাদত করবেন এবং লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের আস্তে আর্টিকেলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরকম সকল তথ্য পেতে নিয়মিত ভাবে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *