|

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার : বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় প্রাচীন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও স্থাপনা। এসব স্থাপনা ও স্থানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার অন্যতম। বর্তমানে এই স্থানটি ঘুরে দেখার জন্য প্রতিদিনই দেশবিদেশ থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমায়। অথচ এক সময় কালে গর্তে হারিয়ে গিয়েছিল এই বৌদ্ধ বিহারটি। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার অন্যতম নিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ ও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ইতিহাস থেকে শুরু করে ধ্বংসাবশেষ পুনরুদ্ধার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। Read in English

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এর অবস্থান ও ইতিহাস

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বৌদ্ধ বিহার হিসেবে খ্যাত সোমপুর বিহার, সোমনাথ বিহার, পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার নামে সুপরিচিত। এই বৌদ্ধ বিহারটি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর নামক ইউনিয়নে অবস্থিত বর্তমানে একাধিক নামে ডাকা হলেও সোমপুর বিহারে এটি প্রাচীন নাম ছিল বলে জানা যায়। পাল বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা ধর্মপাল অষ্টম শতাব্দীর শেষের দিকে কিংবা নবম শতাব্দীর প্রথমদিকে এই প্রতিষ্ঠা করেন বলে অনুমান করা হয়। তবে তার পুত্র দেবপাল নির্মাণ করেছিলেন বলেও লোকমুখে কথিত রয়েছে। তবে ধর্মপাল কিংবা দেবপাল যেই নির্মাণ করে থাকুক না কেন এটি পাল রাজাদের তারাই নির্মিত হয়েছিল এই বিষয়ে কোন মতভেদ নেই।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার

প্রায় ৩০০ বছর ব্যাপী এই বৌদ্ধ বিহারটি বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র হিসেবে টিকে ছিল। তখনকার সময়ে চীন, তিব্বত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধরা ধর্মচর্চা ও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য এখানে আসতেন। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান খ্রিস্টীয় দশম শতকে এই বিহারের আচার্য ছিলেন বলে মনে করা হয়। সোমপুর বিহার টি হঠাৎ করেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় পাল বংশের পর এই উপমহাদেশে হিন্দু রাজাদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে আস্তে আস্তে এই বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধদের আনাগোনা কমতে থাকে ধীরে ধীরে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এর মূল মন্দিরের উপর মাটি জমা হতে থাকে এবং গাছপালা ও জন্ম নিতে থাকে আর এভাবে দেখতে অনেকটা পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে যায়। ফলে জনগণের কাছে পাহাড় বলে মনে হতো আর এর থেকে এই স্থানের নাম পাহাড়পুর হিসেবে পরিচিত।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার

দীর্ঘ ৬০০ বছর মাটিচাপা থাকার পর হাজার উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায় এরপর ১৮৭৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম এই স্থান পরিদর্শন করতে আসে এখানে খনন কার্য পরিচালনা চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাধার মুখে ব্যর্থ হয়ে যান। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে কিছুটা খনন কার্য পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশির দশকে এখানে পুরোদমে খনন কার্য পরিচালনা করা হয় এবং পুরুষ সম্পূর্ণরূপে জনগণের কাছে উন্মোচন করা হয়। কালের গর্তে হারিয়ে যাওয়া এই বৃহৎ ও প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারটি।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার

অভ্যন্তরীণ বর্ণনা ও বর্তমান সৌন্দর্য

প্রায় ২৭ এপ্রিল আকাশ জুড়ে অবস্থিত সোমপুর বিহার দিতে ১৭৭ টি কক্ষ রয়েছে এবং মাঝে রয়েছে বিখ্যাত মূল মন্দিরটি এই মন্দির কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে চতুর্ভুজাকৃতির এসব ভিক্ষুকরা অবস্থান করতেন বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার এর চেয়েও বেশি ছিল বলে ধারণা করা হয় স্থানীয়দের ধারণা অনুযায়ী আশির দশকে যখন করা হয়েছিল তখন ও উচ্চতা আর একটু বেশি ছিল।

এই মন্দিরের দেয়ালে টেরাকোটার কাজ করা ছিল এখনও বিদ্যমান আছে কেন্দ্রীয় মন্দির এগুলো ছাড়াও স্নানাগার শৌচাগার সন্ধ্যাবতীর ঘাট উন্মুক্ত অঙ্গন সত্যপীরের ভিটা গন্ধেশ্বরী মন্দির ক্ষুদ্রাকৃতির অনেকগুলো ইমারত রন্ধনশালা ভোজনশালা পাকা নর্দমা বিভিন্ন মুহূর্তে ইত্যাদির সমন্বয়ে সম্প্রতি তখনকার সময় অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত ছিল যার ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান রয়েছে। এই ধ্বংসাবশেষ দেখতেই প্রতিদিন ভিড় করে অসংখ্য দর্শনার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন গবেষক ও গণতান্ত্রিকদের দল।

বর্তমানে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জাদুঘর বিহার থেকে শুরু করে মন্দির পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে রয়েছে বিভিন্ন ফুলের বাগান যা দর্শকদের সহজেই মোহিত করে আবার দেখতে পাবেন প্রাচীনকালে নির্মিত লাল রঙের ছোট ছোট প্রশ্ন এটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ইতিমধ্যে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পরিকল্পনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে।

পাহাড়পুর সংলগ্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য মূর্তি

  • বেলে পাথরের চামুণ্ডা মূর্তি
  • লাল পাথরের দণ্ডায়মান শীতলা মূর্তি
  • কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর খণ্ডাংশ
  • কৃষ্ণ পাথরের দণ্ডায়মান গণেশ
  • বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি
  • দুবলহাটির মহারাণীর তৈলচিত্র
  • হরগৌরীর ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তি
  • কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্মী নারায়ণের ভগ্ন মূর্তি
  • কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি
  • বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি
  • বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি
  • নন্দী মূর্তি
  • কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তি
  • সূর্য মূর্তি
  • কৃষ্ণ পাথরের শিবলিঙ্গ
  • বেলে পাথরের মনসা মূর্তি

সোমপুর বিহার নিয়ে বেশকিছু ভিডিও ডকুমেন্টারি নির্মাণ হয়েছে, ২০১৬ সালের ঈদুল আযাহায় চ্যানেল আই তে একটি বিশেষ টেলিফিল্ম রাজিব হাসান এর রচনা ও পরিচালনায় ”চাঁদের শহর” প্রচার হয় যার সম্পূর্ণ গল্প ও চিত্রায়ন সোমপুর বিহারকে ঘিরে ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *