মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি সম্পর্কে কিছু কথা
মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি : প্রাচীন ঐতিহ্য আর সবুজ শ্যামল এ ঘেরা আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশে রয়েছে মনমুগ্ধকর অনেক প্রাচীন স্থাপনা। কোথায় যে ইতিহাসের কি উপাদান লুকিয়ে আছে তা আমরা অনেকেই জানি না। আরে না জানার কারণে আমাদের আড়ালে রয়ে যায় অমূল্য সম্পদ। এসব অনেক সময় হারিয়ে যায়। বিলুপ্ত হয়ে যায় প্রাচীন স্থাপনা গুলি। Read in English

প্রত্নতান্ত্রিক সম্পদকে সব দেশে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এমন ভাবে সংরক্ষন করা হয় যা হয়ে ওঠে দর্শনীয়। তেমনি একটি প্রাচীন মনমুগ্ধকর স্থান রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি বা মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি। মহারানী হেমন্ত কুমারীর এই বাসভবন পাচানি জমিদার বাড়ি নামেও পরিচিত। রাজশাহী জেলা সদর থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তর–পূর্বে নাটোর সড়ক অভিমুখে মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি অবস্থিত। পুঠিয়া রাজবাড়ি বা পাচানি জমিদার বাড়ি হচ্ছে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। বাংলায় প্রত্নতান্ত্রিক ঐতিহ্যের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি অন্যতম।
মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি এর ইতিহাস
মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয় পুঠিয়া রাজবংশ এর জমিদার ছিলেন বারো ভূঁইয়াদের একজন। এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা পীতাম্বর। পীতাম্বর এর মৃত্যুর পর তার অনুজ নীলাম্বর জমিদার হয়। সপ্তদশ শতকের মুঘল আমলে তৎকালীন বাংলা বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পুঠিয়া জমিদারি ছিল প্রাচীনতম। লোকমুখে কথিত আছে যে জৈনিক নীলাম্বর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করার পর সেটি পুঠিয়া রাজবাড়ি রূপে পরিচিতি লাভ করে। ১৭৪৪ সালে জমিদারি ভাগ হয় সেই ভাগাভাগিতে জমিদারের বড় ছেলে পান সম্পত্তির সাড়ে পাঁচ আনা এবং অন্য তিন ছেলে পান সাড়ে তিন আনা।

১৯৫০ সাল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা ছিল। প্রথা বিলুপ্ত হলে পুঠিয়া রাজবাড়ী জমিদারিও বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে জমিদারি বিলুপ্ত হলেও সে আমলে নির্মিত তাদের প্রাসাদ মন্দির ও অন্যান্য স্থাপনা ঠিকই এখনো টিকে রয়েছে। অপরুপ এ প্রাসাদ টি ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী তার শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর স্মরণে নির্মাণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি পরলোকগমন করার পর মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি এর আকর্ষণ ও জৌলুস ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। এ কারণেই অযত্ন আর অবহেলায় এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। বেহাত হয়ে যায় জমিদারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র গুলি। বর্তমানে সরকারি উদ্যোগে মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি কিছুটা মেরামত করা হয়।
পুঠিয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে দ্বিতল বিশিষ্ট আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি একটি আকর্ষণীয় ইমারত। জমিদার বা রাজারা এখান থেকে তাদের কর্ম পরিচালনা করতেন ভবনের সম্মুখভাগের স্তম্ভ অলংকরণ, কাঠের কাজের দেয়ালেও দরজার উপরে ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণশৈলী পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ির ছাদ সমতল এবং টালি ব্যবহার করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ী চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল।
রাজ বাড়ির আশেপাশে রয়েছে ৬ টি রাজ দিঘী। প্রত্যেকটা দিঘির আয়তন ৬ একর করে। এবং ৬ টি মন্দির রয়েছে। সবথেকে বড় মন্দিরের নাম শিব মন্দির এছাড়াও রয়েছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালে অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলক কারুকাজ রয়েছে। জোড়বাংলা মন্দির বাংলা মন্দির পঞ্চরত্ন অর্থাৎ চুরা বিশিষ্ট মন্দির। মোটকথা বাংলার বিভিন্ন গঠনরীতি মন্দিরগুলো প্রতিটি আকর্ষণীয় এছাড়া রানীর স্নানের ঘাট, অন্দরমহল মিলিয়ে বিশাল মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি এর প্রাঙ্গন।
পুঠিয়া রাজবাড়ি যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে রাজশাহী : ঢাকা থেকে সড়ক রেল ও আকাশপথে রাজশাহী যাওয়া যায়। সড়ক পথে ঢাকা গাবতলী ও কমলাপুর থেকে বাসে উঠে যেতে পারবেন রাজশাহীতে। এজন্য গ্রীনলাইন দেশ ট্রাভেলস শ্যামলী হানিফ বাস সার্ভিস রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। শ্রেণীভেদে ভাড়া ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
রেলপথে যাওয়ার জন্য রয়েছে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ও পদ্মা এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন আরো একটি বর্তমানে যোগ হয়েছে বনলতা এক্সপ্রেস। রোববার ব্যতীত প্রতিদিন দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং মঙ্গলবার ব্যতীত প্রতিদিন রাত ১১ টা ১০ মিনিটে কমলাপুর থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এছাড়া আকাশপথে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ইউনাইটেড এয়ার ও ইউএস–বাংলা বিমানে আসা যাওয়া যায়।
রাজশাহী থেকে মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি : পুঠিয়ার দূরত্ব রাজশাহী থেকে ৩৪ কিলোমিটার এবং নাটোর থেকে ১৮ কিলোমিটার রাজশাহী থেকে নাটোর গ্রামীণ বাসে চড়ে বা লোকাল বাসে করে রাজশাহী নাটোর মহাসড়ক এর পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে ৫ থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেই মহারানী হেমন্ত কুমারীর পুঠিয়া রাজবাড়ি পেয়ে যাবেন।