জুনের মাঝে মাঝে থেকে অগাস্ট পর্যন্ত এই সময়টা থেকে বর্ষাকাল অর্থাৎ অনেক বৃষ্টি হয়। এই সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। বাসা বাড়ির আশেপাশে ছাদের টপে চৌবাচ্চায় পানি জমে। আর এইসব জমে থাকা পানিতে জন্মায় ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই এডিস মশার বিস্তার থাকে অনেক বেশি। এজন্যই সময়টাকে ডেঙ্গুর মৌসুমও বলা হয়ে থাকে। এ সময়ের তাপমাত্রা বাতাসের আদ্রতা ও বৃষ্টির উপর নির্ভর করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। Read in English
বর্ষাকালে সবসময় আপনাকে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। যেকোন প্রকার জ্বর হলে কখনোই অবহেলা করা যাবে না। ডেঙ্গু জ্বর হলে তা সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ হলে সুস্থ হতে দুই তিন সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তবে আপনি যদি শুরুতেই সচেতন হোন তাহলে মৃত্যু ঝুঁকি কিংবা অন্যান্য জটিলতায় এড়ানো সম্ভব। এর জন্য আপনাকে সচেতন হতে হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক উপসর্গগুলো।
গরমে সুস্থ থাকতে যা খাবেন। প্রচন্ড গরমে স্বাস্থ্যকর খাবার
- ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক উপসর্গ
- তীব্র জ্বর।
- শরীরে লালচে ফুসকুড়ি বা র্যাশ।
- ঘাড়, পিঠ ও মাংসপেশিতে ব্যথা।
- অস্থিসন্ধি বা হাড়ে ব্যথা।
- চোখের পেছনে ও চারপাশে ব্যথা।
- খাবারে অরুচি ও স্বাদের পরিবর্তন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য।
ডেঙ্গু চরে আমাদের বিভিন্ন রকমের জটিলতা দেখা দিতে পারে। চলুন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক। ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। এ দুটি হল ক্লাসিক্যাল এবং হেমোরেজিক। কাছিকাল ডেঙ্গুতে জ্বর সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মধ্যেই সেরে যায়। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে পাঁচ থেকে সাত দিন পর থেকে জটিলতা শুরু হয়। অনেক সময় নাক মুখ দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এছাড়াও মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। রক্তের প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকা কমে গিয়ে শরীরের চামড়া নিচে ইন্টার্নাল ব্লিডিং বা রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
পরিস্থিতি আরও জটিল হলে রোগীর হাত–পা দ্রুত ঠান্ডা হতে শুরু করে, রক্তচাপ কমে যায়। এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচণ্ড ঘামতে শুরু করে ও ছটফট করতে থাকে। বমি ভাব বা বমি হতে পারে। এ সময় শ্বেতরক্তকণিকার স্বল্পতা, ইলেক্ট্রোলাইটের অসমতা, যকৃতের সমস্যা, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী শকে চলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
জিপি এসএমএস কেনার কোড ২০২২ । জিপি এসএমএস অফার ২০২২
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি চিকিৎসা নিবেন
- ডেঙ্গু জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। এ সময় মাথায় পানি দেওয়া ও শরীর মুছে দেওয়ার মাধ্যমে জ্বর কমাতে হবে। এ ছাড়া ছয় থেকে আট ঘণ্টা পরপর জ্বরের তীব্রতা বুঝে প্যারাসিটামল জাতীয় মেডিসিন দিতে হবে।
- ডেঙ্গু জ্বরে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলেও অ্যাসপিরিনজাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে ডেঙ্গু জ্বর জটিল আকার ধারণ করলে রোগীর শরীরে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।
- ডেঙ্গু জ্বরের মূল চিকিৎসা হলো শরীরে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থাপনা। পানির পাশাপাশি ফলের রস, স্যুপ, ওরস্যালাইন, ডাবের পানি, শরবত প্রভৃতি তরল খাবার খাওয়াতে হবে।
- ডেঙ্গু রোগী শারীরিকভাবে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্তত সাত দিন ভারী কাজ করা থেকে বিরত থেকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
- জ্বরের চার–পাঁচ দিন পর সিবিসি ও প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্লাটিলেট কাউন্ট লাখের কম হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।
- জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা
ডেঙ্গু প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হচ্ছে এডিস মশার বিস্তার রোধ করা। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এ মশা তুলনামূলক পরিষ্কার ও স্বচ্ছ পানিতে বিস্তার করে। বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে সবচেয়ে বেশি। এ সময় বাড়ির আশপাশে পানি জমে এমন যায়গা, বদ্ধ জলাশয় পরিষ্কার রাখতে হবে। ফ্রিজ ও এসির পানি যেন না জমে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফুলের টবে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। দিনে ঘুমালে মশারি ব্যবহার করুন বা অ্যারোসল স্প্রে করুন। ডেঙ্গু মৌসুমে বাইরে গেলে হাত–পা ঢেকে থাকে, এমন পোশাক পরুন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সব সময় মশারির ভেতরে রাখুন। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরপরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আমাদের আজকের আলোচনা থেকে আপনি ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব এবং প্রতিরোধ দুটি জানতে পেরেছেন। সুতরাং দ্রুত সচেতন হয়ে যান। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধ করুন। সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। বাড়ি ঘরের আশেপাশে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন