স্তন কর সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। আপনি যদি না পড়ে থাকেন তাহলে এখানে ক্লিক করে পড়ে নিতে পারেন। আজ আমরা আলোচনা করব, কে সেই মহিলা যে প্রথম প্রতিবাদ করেছিল স্তনকর এর বিরুদ্ধে এবং কি ঘটেছিল তার পরে। Read in English
সর্বপ্রথম যে মহিলা স্তন কর এর প্রতিবাদ করেছিল তার নাম ছিল নাঙ্গেলি। উনিশ শতকের প্রথম দিকে ভারতের ট্রাভানকোর রাজ্যের চেরথালায় বাস করতেন নাঙ্গেলি নামের এই এজহাবা গোত্রের নিম্নবর্ণের হিন্দু মহিলাটি। তার স্বামীর নাম ছিল চিরকান্দান। এই দম্পতি ছিল নিঃসন্তান। তারা ছিল অতি সাধারন মানুষ। চাষাবাদ করে জীবন নির্বাহ করতো।
কি ঘটেছিল সেদিন?
অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও ট্রাভানকোরের স্থানীয় শুল্ক কর্মকর্তা যে কিনা স্তনকর সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করত, সে নাঙ্গেলির বাড়িতে এসেছিল নিম্নবর্ণের হিন্দু মহিলাদের বুকের কাপড় পরিধান করা বা না করার বিষয়টি জরিপ করতে এবং কর সংগ্রহ করতে। কর্মকর্তা দেখতে পেল যে নাঙ্গেলি তার বুকের স্তনের উপর কাপড় পরিধান করে আছে। কর্মকর্তা নাঙ্গেলির কাছ থেকে এর জন্য কর দাবি করল এবং তাকে বার বার কর পরিশোধের জন্য চাপ দিতে লাগল। কিন্তু নাঙ্গেলি স্তনকর দিতে অস্বীকার করে।
এভাবে দিনের পর দিন কর সংগ্রহ কর্মকর্তা তার বাড়িতে এসে শুল্কের দাবি আদায়ের চাপ প্রয়োগ করতে লাগলো। এবং বিষয়টি মন্দিরের পুরোহিতের এবং স্থানীয় উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। শুল্ক কর্মকর্তা শুল্ক প্রদানের জন্য নাঙ্গেলি কে আরো বেশি চাপ প্রয়োগ করতে থাকে এবং তাকে অতিষ্ঠ করে তুলে। এদিকে দিনের–পর–দিন কর এর বোঝাও বাড়তে থাকে।
অবশেষে একদিন নাঙ্গেলি স্তন কর প্রদান করতে রাজি হয়। নির্দিষ্ট দিনে কর সংগ্রহকেরা তার বাড়িতে কর সংগ্রহ করতে এলে তিনি তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলেন। এরপর নাঙ্গেলি ঘরের ভেতর প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার স্তন দুটি কেটে ফেললেন। কলাপাতায় রক্তমাখা স্তনদুটি মুড়িয়ে স্তন শুল্ক হিসেবে তার কর্তিত ও রক্তাক্ত স্তনদুটি চুল কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন। স্তন কর্তনের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নাঙ্গেলির মৃত্যু হয়। নাঙ্গেলির স্বামী চিরুকান্দন নাঙ্গেলি বিকৃত মৃতদেহ দেখে শোক সহ্য করতে পারলেন না। তিনি নাঙ্গেলি শেষকৃত্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে চিতায় আত্মহত্যা করলেন। ভারতের সম্ভবত এটাই ছিল পুরুষের প্রথম সতীদাহ।
এই বর্ণবৈষম্যের ফলে ওই অঞ্চলে কি ঘটেছিল?
নিজের নারীত্ব অভিশাপ হয়ে বেঁচে থাকুক নাঙ্গেলি সেটা চায়নি। তিনি বর্ণপ্রথা মানতে চাননি। তিনি চাননি ভোগ্য পণ্যের মত তার শরীরের উপর কর আরোপিত হোক। এর প্রতিবাদ স্বরূপ সে তার স্তন কেটে ফেলেন। তার মৃত্যুবরণের ঘটনায় সবাই ক্ষেপে ওঠে। মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। অবশেষে রাজা বন্ধ করতে বাধ্য হয় বর্বর সেই স্তন কর প্রথা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় টি হচ্ছে সে সময় হিন্দু পুরোহিতরাই বলেছিল যে নিচু বর্ণের নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করা ধর্মবিরোধী।
নাঙ্গেলির মৃত্যুতে স্তন কর বন্ধ হলেও শরীর আবৃত অনাবৃত রাখা না রাখা নিয়ে অনেক ঘটনার জন্ম হয় ভারতবর্ষে। এমনকি ১৮৫৯ সালে এই বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ ভারতে একটি দাঙ্গাও সংগঠিত হয়। এই দাঙ্গাটি কাপড়ের দাঙ্গা হিসেবে পরিচিত। এই দাঙ্গার বিষয় ছিল নারীদের শরীর আবৃত রাখার অধিকার। যে অধিকারের জন্য ১৮৫৯ সালের দাঙ্গার অনেক বছর আগেই প্রাণ দিয়েছিলেন এক হতভাগ্য নারী নাঙ্গেলি।