বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জাদুঘর: রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরের নাম শোনেননি এমন কেউ হয়তো বাংলাদেশ নেই। বরেন্দ্র জাদুঘর বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন জাদুঘর। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বরেন্দ্র জাদুঘর তৈরি হয়েছিল। বরেন্দ্র জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন জাদুঘর সম্পর্কে অনেকেই বিস্তারিত তথ্য জানতে চাই। আমরা আমাদের আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আপনাদেরকে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জাদুঘর বরেন্দ্র জাদুঘর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবো। Read in English
বাংলাদেশের এই প্রাচীন জাদুঘর সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে যা আমাদের অনেকের অজানা। সেই অজানাকে জানার উদ্দেশ্যে আমাদের আজকের এই আলোচনাটি। আপনারা যারা বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জাদুঘর বরেন্দ্র জাদুঘর সম্পর্কে সকল তথ্য সমূহ জানতে চান তারা অবশ্যই আমাদের আজকে এই নিবন্ধটি সম্পূর্ণ পড়বেন। বরেন্দ্র জাদুঘর কিকি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলোর স্থান পেয়েছে সে সংক্রান্ত সকল তথ্য সমূহ আমাদের আজকের এই আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে। যারা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা অবশ্যই এই আলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আশা করি আপনাদের জানার ইচ্ছা আমরা এই আলোচনার মাধ্যমে পূরণ করতে পারব।
অনলাইনে টাকা ইনকাম করার উপায় ( Online Earning Way)
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জাদুঘর এর ইতিহাস
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জাদুঘর বরেন্দ্র জাদুঘর রাজশাহী শহরে অবস্থিত। রাজশাহী মহানগর কেন্দ্রস্থল হেতেমখা এলাকায় বরেন্দ্র জাদুঘর অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জাদুঘর বরেন্দ্র জাদুঘর প্রত্নতত্ত্ব শহরের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান। বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক গুণী ব্যক্তির অবদান রয়েছে। ইতিহাস থেকে বরেন্দ্র জাদুঘর এর স্থাপনার পেছনে যে সকল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নাম পাওয়া যায় তারা হলেন-
নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজ পরিবারের জমিদার শরৎকুমার রায়, আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামপ্রসাদ চন্দ্র। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এর জন্য সর্বপ্রথম বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠন করা হয়।
রাজশাহী থেকে অন্যান্য জেলার দূরত্ব 2022
বরেন্দ্র জাদুঘর নির্মাণের কারণ
১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি গঠনের পরে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে ৩২ টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করা হয়। এবং সেই নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করার জন্য বরেন্দ্র জাদুঘর নির্মাণ এর প্রয়োজন পড়ে। বরেন্দ্র জাদুঘর নির্মাণ এর জমি প্রদান করেন রাজ পরিবারের জমিদার শরৎকুমার রায়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে বরেন্দ্র জাদুঘর এর নির্মাণকাজ শেষ হয় এবং সেই বছর তৎকালীন গভর্নর কারমাইকেল জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা জাদুঘর বরেন্দ্র জাদুঘর এর সকল সংরক্ষিত নিদর্শন এর দাবি করলে গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে জারিকৃত একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বরেন্দ্র জাদুঘর এর নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যাপারে অধিকার প্রদান করে। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও বরেন্দ্র জাদুঘর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে নওগাঁ পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের খনন কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি একক প্রচেষ্টায় পাহাড়পুর থেকে ২৫৬ নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়। সেগুলো বরেন্দ্র জাদুঘর সংরক্ষণ করা হয়েছে।
রাজশাহী পদ্মা গার্ডেন। সুন্দর একটি বিকেল কাটানোর জন্য সুন্দর জায়গা
বরেন্দ্র জাদুঘরের নিদর্শনসমূহ
বরেন্দ্র জাদুঘরের সংগ্রহ সংখ্যা ৯ হাজারের ও বেশি। হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার বেশ কিছু নিদর্শন বরেন্দ্র জাদুঘরে রয়েছে। মহেঞ্জোদারো সভ্যতার বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ব এবং পাথরের মূর্তি রয়েছে বরেন্দ্র জাদুঘরে। এছাড়াও খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে নির্মিত বুদ্ধমূর্তি, ভৈরবের মাথা এবং গঙ্গামতি সহ অসংখ্য মূর্তি এই জাদুঘরে রয়েছে। এই জাদুঘর অমূল্য সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত। মুঘল আমলের রৌপ্য মুদ্রা থেকে শুরু করে চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা সহ নানা ধরনের নিদর্শন রয়েছে বরেন্দ্র জাদুঘরে।
-
- বরেন্দ্র জাদুঘর এ প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি পুঁথি রয়েছে। যেগুলো বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। এই পথই গুলোর মধ্যে ৩,৬৪৬ সংস্কৃত ভাষায় রচিত এবং বাকিগুলো বাংলা ভাষায় রচিত।
- পাল যুগ থেকে শুরু করে মুসলিম যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এর আঁকা ছবি বরেন্দ্র জাদুঘর রয়েছে।
- বিখ্যাত নুরজাহানের পিতা ইমাদ উদ্দৌলার অঙ্কিত চিত্র রয়েছে বরেন্দ্র জাদুঘরের।
বরেন্দ্র জাদুঘরের সংগ্রহ
বরেন্দ্র জাদুঘরে ১২ হাজারেরও বেশি গ্রন্থ সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থ শালা রয়েছে। বরেন্দ্র জাদুঘর কে মোট ৭ টি প্রদর্শন কোষ্ঠে ভাগ করা হয়েছে। বরেন্দ্র জাদুঘরের এই সাতটি প্রদর্শন কোষ্ঠে কি কি নিদর্শন রয়েছে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি ?
- প্রথম প্রদর্শন কোষ্ঠে নওগাঁ পাহাড়পুর থেকে উদ্ধার করা ২৫৬ টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে।
- দ্বিতীয় প্রদর্শন কোষ্ঠে হিন্দু ও বৌদ্ধদের তৈরি নানা ভাস্কর্য রয়েছে।
- তৃতীয় ও চতুর্থ প্রদর্শন কোষ্ঠে রয়েছে নানা দেব-দেবীর মূর্তি
- পঞ্চম প্রদর্শন কোষ্ঠে স্থান পেয়েছে অসংখ্য বৌদ্ধ মূর্তি
- ষষ্ঠ প্রদর্শন কোষ্ঠে রয়েছে অসংখ্য ভাষায় লিখিত ছোট বড় পাথরের খন্ড
- এবং সপ্তম প্রদর্শন কোষ্ঠে সংরক্ষণ করা হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তৈরি নিদর্শনসমূহ।
বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জাদুঘর বরেন্দ্র জাদুঘর সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ আমাদের আজকের এই আলোচনায় উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। আপনারা আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জাদুঘর বরেন্দ্র জাদুঘর সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সমূহ আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। বরেন্দ্র জাদুঘর রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। সময় পেলে অবশ্যই সকলের হরেন্দ্র জাদুঘর ভ্রমণ করা উচিত। আলোচনার কোনো অংশ বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। আমরা সকল ধরনের সাহায্য করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। আমাদের সাথে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ।