ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানুন
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা এবং অসুবিধা: আমরা অনেকেই ক্রেডিট কার্ড নিতে চাই আবার অনেকেই ক্রেডিট কার্ড নিতে পছন্দ করে না। কেন সবাই ক্রেডিট কার্ড পছন্দ করে না আবার অনেকেই কেন ক্রেডিট কার্ড নিতে চায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের পোস্টে। ক্রেডিট গড়ে তোলা, ক্যাশ ব্যাক পাওয়া, বা প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ইত্যাদি ক্রেডিট কার্ডের উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা। আবার ক্যাশ বহন করতে হয়না বলে বেশ নিশ্চিন্তে থাকা যায়। তবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে শুধু সুবিধা রয়েছে, কোনো অসুবিধা নেই; এমন ভাবলে বোকামি হবে। এই পোস্টে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব আপনাদের।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা
চলুন প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাগুলো সম্পর্কে
ক্রেডিট রেকর্ড তৈরী
ক্রেডিট কার্ড সঠিকভাবে ব্যবহারে ক্রেডিট রেকর্ড তৈরী হয়। আর ক্রেডিট কার্ডের খরচের লিমিট এই ক্রেডিট রেকর্ডের উপর অনেক সময় নির্ভর করতে পারে। আপনার ক্রেডিট হিস্ট্রি যদি ভালো হয়ে থাকে, তবে ক্রেডিট কার্ড ভিত্তিক বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা আপনি পাবেন। আপনি যদি নিয়মিত ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করে থাকেন এবং ভাল পরিমাণ লেনদেন করেন তাহলে আপনার ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধি পাবে। ফলে আপনি পরবর্তী কার্ড বা লোনের ক্ষেত্রে এর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
প্রতারণা থেকে নিরাপত্তা
ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীদের লেনদেনকে নিরাপত্তা প্রদান করতে যথেষ্ট ব্যবস্থা করে। কোনো কারণে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো লেনদেন আপনার কার্ড থেকে হচ্ছে বলে মনে হয়, তবে তৎক্ষণাৎ ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডারকে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারবেন। আবার কার্ড খুঁজে না পেলে বা হারিয়ে ফেললে ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডারকে কল করে জানালে উক্ত কার্ড ব্লক করে আপনাকে নতুন কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে।
ক্যাশ বহন করতে হয়না
ক্যাশ ব্যবহার করা থেকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা অনেকক্ষেত্রেই বেশ সুবিধাজনক। এছাড়া ওয়ালেটে খুব কম জায়গা দখল করে বলে ক্রেডিট কার্ড বহন করতে কোনো সমস্যা হয়না। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে ক্রেডিট কার্ড একটি আদর্শ পেমেন্ট মেথড হিসেবে পরিণত হয়েছে। কোথাও যাওয়ার সময় বেশ সহজে ক্রেডিট কার্ড পকেটে বহন করা যায়। আবার এই কার্ড হারিয়ে ফেললে সেক্ষেত্রে নতুন কার্ড ইস্যু করে নিতে পারবেন অল্প সময়ের মধ্যে।
রিওয়ার্ডস
ক্যাশ ব্যাক ও পয়েন্টস আকারে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে আপনি রিওয়ার্ডস পেতে পারেন। এছাড়া অনেক ক্রেডিট কার্ড প্রোভাইডার রয়েছে যারা সাইন আপ বোনাসও প্রদান করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে।
খরচের হিসাব রাখা
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে করা সকল লেনদেন রেকর্ড করে থাকে ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান এবং খুব সহজেই ট্র্যাক করা যায়। আপনার লেনদেনের সকল তথ্য, অর্থাৎ মার্চেন্টের নাম, খরচের পরিমাণ, তারিখ, ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এইসব তথ্য হাতের নাগালে থাকার ফলে আপনি খুব সহজেই খরচের হিসাব রাখতে পারবেন।
কিস্তিতে পণ্য কেনা এবং তাৎক্ষণিক খরচ না হওয়া
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি কিস্তিতে পণ্য কিনতে পারবেন। বড় আকারের পেমেন্ট সহজেই দীর্ঘমেয়াদি ছোট ছোট কিস্তিতে বিভক্ত করে প্রদান করা সম্ভব। অপরদিকে ক্রেডিট কার্ডের বিল তাৎক্ষণিক দিতে হয়না বলে জরুরি প্রয়োজনে অর্থের ব্যবস্থা করা বেশ সহজ হয়।
ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ড মানেই শুধু রিওয়ার্ড বা সাইন-আপ বোনাস এর সমাহার তা কিন্তু নয়। এটি একটি ফিনান্সিয়াল টুল যা গুরুত্ব সহকারে ব্যবহার না করলে অযথা ঝণ ও ফি দিতে হবে। তাই ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা জেনে রাখা খুব জরুরি। চলুন ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা সম্পর্কে সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
অতিরিক্ত খরচের মানসিকতা
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার অতিরিক্ত খরচের মানসিকতা সৃষ্টি হতে পারে। যেহেতু ক্রেডিট কার্ডের মূল লক্ষ্য আপনার জমানো টাকার বাইরে খরচের সুবিধা প্রদান করা, সুতরাং আপনি হিসাব করে খরচ না করার ফলে বাড়তি খরচের অভ্যাস তৈরী হতে পারে, যেটা অনেক ক্ষেত্রেই আপনার জীবনে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
ফি ও ইন্টারেস্ট
ক্রেডিট কার্ডের ফি ও ইন্টারেস্ট এমন দুইটি বিষয় যা ব্যবহারকারীর অজান্তেই বাড়তে পারে। বিশেষ করে ইন্টারেস্ট বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে যে তা ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ইন্টারেস্ট এর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী দেরিতে পেমেন্ট, ব্যালেন্স ট্রান্সফার, ক্যাশ এডভান্স, ফরেইন ট্রানজেকশন, ইত্যাদি বিষয়ে ফি চার্জ করে থাকে। কিছু ইস্যুকারী তো এমনকি শুধুমাত্র কার্ড ব্যবহারের জন্য বার্ষিক ফি চার্জ করে।
এই ধরণের ইন্টারেস্ট এবং অন্যান্য ধরণের ফি সম্পর্কিত সমস্যা থেকে বাঁচার সেরা উপায় হলো বাকি টাকা (অন্তত মিনিমাম পেমেন্ট) প্রতি মাসে পরিশোধ করা। তা সম্ভব না হলে, যতটুক সম্ভব, বাকি টাকা পেমেন্ট করে দেওয়ায় উত্তম। তবে এক্ষেত্রে আপনার খরচ বাড়বে ছাড়া কমবেনা।
ঝণ
ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত খরচের ফলে ঝণের কবলে পড়তে হয় অনেককে। নিয়মিত খরচের হিসাব না রাখতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যে অর্থের স্বল্পতায় ভোগার পাশাপাশি অতিরিক্ত ঝণ জমে যেতে পারে। সুতরাং যে পরিমাণ অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব, শুধুমাত্র সে পরিমাণ অর্থ খরচ করাই উত্তম। মনে রাখতে হবে, ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে আপনি কিন্তু ধার করা অর্থ ব্যবহার করছেন। তাই হিসাব রেখে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে ঝণের মুখোমুখি হতে বেশি সময় লাগবেনা।
ক্রেডিট স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব
ক্রেডিট কার্ড ঠিকমত ব্যবহার করতে না জানলে এটি আপনার ক্রেডিট স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর ক্রেডিট স্কোর কমলে উল্লেখিত আলাদা সুবিধাসমূহ, যেমনঃ অটো লোন, কার লোন, ইত্যাদি নাও পেতে পারেন।
ঠিক সময়ে বিল পে না করা, একদমই বিল পে না করা বা উপলব্ধ ক্রেডিট লিমিটের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে ক্রেডিট স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ক্রেডিট কার্ডের স্কোর ঠিক রাখতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সঠিক নিয়মগুলো অনুসরণ করা উচিত।
জীবনের সকল বিষয়ের মত ক্রেডিট কার্ডের ও সুবিধা অসুবিধা রয়েছে। তবে আপনি যদি এই প্লাস্টিকের কার্ড সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না জানেন, তবে বেশ সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোভাবে জেনে শুনে ব্যবহার করবেন।