সফলতা অর্জনের ১০ টি কথা

সাফল্য বা সফলতা জীবনের মূলমন্ত্র। সাফল্য বা সফলতা আসলে কোন জাদু বা আচমকা ঘটে যাওয়া কোনো ধরনের ব্যাপার নয়। সাফল্য বা সফলতা জীবনে এমনি এমনি চলে আসে না তা পেতে অনেক কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সাফল্য হঠাৎ চলে আসে না। Read in English

মানুষের মৌলিক গুনাবলির সমষ্টি থেকে অর্জিত হলো এই সাফল্য। তবে মানুষ একের পর এক ছোট ছোট সাফল্যে দ্বারা অর্জিত সাফল্য থেকেই একদিন বড় সফলতা পায়। মানুষ ভেদে একেকজনের সাফল্য একেক রকম হতে পারে। যেমন, একজন কৃষকের ছেলের সাফল্য কি হতে পারে হতে পারে যে সে পড়াশোনা শেষ করে জীবনটাকে সুন্দর করে সাজানোর জন্য নিজের যোগ্যতায় নূন্যতম শুধুমাত্র একটি চাকরি পাওয়া দরকার যা তার জীবনে বয়ে আনবে অনাবিল সুখ আর শান্তি। কিন্তু পক্ষান্তরে একজন ও সমৃদ্ধশালী বা প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানদের কাছে সাফল্য কি হতে পারে তাদের কাছে সাফল্যের মানে হতে পারে বাবার টাকা থেকেই পড়াশোনা শেষ করে বাবার টাকা থেকে ব্যবসা করে গাড়ি, বাড়ি করে, অনেক টাকা আয় করা। একেকজনের সাফল্যের গল্প বা সফলতা একেক রকমের হতেই পারে। বস্তুত, সাফল্যের সার্বজনীন আকারআকৃতি নির্ণয় করা সহজ নয় এটি খুবই কষ্টকর একটি বিষয়। কারণ একেকজনের কাছে সাফল্যের সংজ্ঞা একেক রকম। অর্থাৎ একজনের কাছে যে সাফল্য অন্যজনের কাছে তা নাও হতে পারে।তবে সাফল্যের বিষয়ে কিছু কথা বলা যেতে পারে যা সাফল্য আনতে অনেকাংশে সাহায্য করবে এবং সাফল্যের সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায় –——

dizny-20190717140209

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

আপনার সাফল্য আপনার কাছে যদি আপনি অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারেন এবং যদি আপনি যা পেয়েছেন সেই পাওয়ার মাঝে আপনার সুখ খুঁজে নিয়ে থাকতে পারেন

জীবনে যারা সাফল্য আনতে পেরেছেন ইতিহাসের পাতায় যাদের নাম নাম লেখা আছে তারা এমনি এমনি সফলতা অর্জন করেননি। তারা অনেক পরিশ্রম, শ্রম এবং অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে সফলতা আনতে পেরেছেন এবং সফলতার শিখরে পৌঁছানোর জন্য অধ্যবসায়ের অনেক অনেক প্রয়োজন।যে সব বিষয় গুলো থেকে মানুষকে সফল আনতে সাহায্য করা যায় তা নিম্নরূপ দেয়া হলোঃ

১। আকাঙ্ক্ষা

আপনার সফলতা পাওয়ার আগ্রহ থাকা লাগবে অনেক। আপনি যা চান বা যা পেতে চান তা যেন যুক্তিযুক্ত হয় তবে তা পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা কাজে লাগানো উচিত। যদি যুক্তি সংগত না হয় তবে আপনার চেষ্টা বিফলে যাবে। অর্থাৎ কোন কিছু পাওয়ার জন্য আপনার ভেতরে একটি নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে। তবেই পাওয়ার যথেষ্ট চেষ্টা সম্ভব হবে।

লক্ষ্যমাত্রা

জীবনে সফলতা আনার মূল মন্ত্র হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা স্থির। লক্ষ্যমাত্রা স্থির না হলে জীবনে সফলতা আনা সম্ভব নয়। যে কাজই হোক যেমন কাজই হোক না কেন সে অবস্থানে পৌঁছানোর বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা উচিত অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। তবে লক্ষ্যমাত্রা স্থির না করলে সাফল্যতা দ্বারে পৌঁছানো যাবে না। সাথে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য প্রবল ইচ্ছা টাও রাখতে হবে। কারণ শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেই হবেনা বরং সেখানে পৌছানোর জন্য নিজের মনের তীব্র যে ইচ্ছা থাকা দরকার। তা না হলে সফলতার দ্বারে বোঝানো যাবে না। তাই ইচ্ছা থাকা টাও জরুরি। তবেই সফলতার দ্বারে পৌঁছানো সম্ভব।

৩। অঙ্গীকার

অঙ্গীকার দরকার অনেকাংশে দরকার সাফল্য ও সমৃদ্ধি যে কোন কাজে আনার জন্য। কারন কোন সফলতা আনার জন্য লক্ষহীন নিয়ে চললে হবে না কিংবা কাজে বাধা থাকলেও চলবে না। সাফল্যের জন্য চাই পরিকল্পনা সম্পন্ন জীবন। একেক জনের অঙ্গীকারবদ্ধের পদ্ধতি একেক রকম। যেমন যে খেলে মানে খেলোয়াড়রা আর কি যখন খেলতে নামে মাঠে তখন তারা জিতার জন্য অঙ্গীকার নেয় তারপরও দেখা যায় যে তাদের একদল হেরেই যায় খেলায়। কারন এই হেরে যাওয়ার কারন কিন্তু কোন না কোন জায়গায় অঙ্গীকারবদ্ধের। তাদের ক্ষমতা বা দক্ষতার অভাবের জন্য তারা হারে না তারা হেরে যায় ভুল অঙ্গীকারের জন্যে। খেলোয়াড়দের সফলতার দ্বারপ্রান্তে থাকার জন্য এই অঙ্গীকার অনেক সাহায্য করে। কারন খেলোয়াড়দের মনে যতই প্রবল অঙ্গীকার থাকবে খেলোয়াড়েরা ততই সফলতা পাবে। এইজন্য উচিত আগে সঠিক পরিকল্পনা করা এবং তাতে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া।

৪। দায়িত্ববোধ

সফলতা আনতে গেলে দায়িত্বশীল হওয়ার অনেক দরকার। দায়িত্ব নেয়া না শিখলে দায়িত্ববোধ আসবে না। দায়িত্ব না নিয়ে অনেক নামিদামি ব্যক্তি হওয়া, প্রভাবশালী অর্থশালী হয়ে সুখে আয়েশ করে জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। কারন সফলতা খুব সাধারণ কিছু নয় যা এমনি এমনি চলে আসবে। সফলতা পেতে গেলে জীবনে একবার হলেও অন্তত সেই সফলতা আনার জন্য ঝুঁকি নেয়ায় লাগবে। তার মানে এই নয় যে অপরিকল্পিত কোন সিধান্ত নিয়ে সেটা আরো বেশি খারাপ করে ফেলা বা কারো সাহায্য না নিয়ে একা একাই করা। দায়িত্ব নেয়া উচিত অবশ্যই নিজের নেয়া উচিত কিন্তু বিচার বিবেচনা করে সঠিকটাই নেয়া উচিত যাতে করে সফলতা আসে অবশ্যই আসে।

৫। আত্নবিশ্বাস

কাজে সাফল্য এমনি আসে না। কাজে সাফল্যের জন্য চাই দৃঢ় বিশ্বাস। দৃঢ় বিশ্বাসের অধিকারীর দ্বারা সাফল্য আনা সম্ভব।নিজের মনে যদি প্রতিজ্ঞা আর দৃঢ় বিশ্বাস থাকে তবে সাফল্য আনা যাবে আর সেটাই হবে মূল চাবিকাঠি জীবনে সফলতা আনার। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই সফল হওয়া যাবে যদি আত্নবিশ্বাস মনে থাকে আর সেটাকে কাজে লাগানো যায়। এইজন্য হতাশাকে আত্নবিশ্বাসের রুপে নিয়ে গিয়ে সফলতা আনুন।

৬। অধ্যবসায়

অধ্যাবসায় হলো জীবন গড়ার মূলমন্ত্র। কারন অধ্যাবসায়ের দ্বারাই সম্ভব জীবনের কঠিন থেকে কঠিন কাজ সহজতর করা। অধ্যাবসায় শুধুমাত্র বুদ্ধির উপর নির্ভর করে না। অধ্যাবসায় নিজের ওপর নিজের কাজের ওপর। কারন অধ্যাবসায়ের দ্বারাই সম্ভব জীবনে সফলতা আনা। এই পৃথিবীতে শিক্ষিত মানুষের অভাব নেই কিন্তু সেই সাথে শিক্ষিত অসফল মানুষেরও অভাব নেই। তবে তাই বলে যারা সফল হয়েছেন তারা কিন্তু লক্ষ্য স্থির রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। কারণ প্রতিভা বা শিক্ষা থাকলে সফল হওয়া যাইনা সফল হতে গেলে অধ্যাবসায়ী হতে হয়।জীবন নামক যুদ্ধে যারা পালিয়ে যাননি যারা সংগ্রাম চালিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন।তারাই ইতিহাসে বিজয়ী হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন কারণ তারা অধ্যাবসায়ী ছিলেন। তাই ইতিহাস বিজয়ী হতে গেলে অধ্যাবসায়ী হওয়া দরকার।

৭। শেখার আগ্রহ

সাফল্য লাভের অনেক শর্তই আছে। তবে সাফল্য লাভের প্রধান শর্ত হলো নিয়ম করে শিক্ষালাভ করা এবং প্রচুর জ্ঞানার্জন করা। কখনো মনে এটা আনা উচিত নয় যে আমি অনেক শিখে গেছি অনেক জেনে গেছি আমার আর দরকার নাই। কারন এটাই একসময় অসফলতার কারন হয়ে দ্বারাই। শিক্ষার কোন শেষ নাই। একটা কথা মাথায় রাখা উচিত সবারই যে,”জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবার অনেক কিছু শেখার থাকে। তাই কোন শিক্ষাকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। আপনি যত বড়ই মানুষ হন না কেন নিজেকে সবসময় একজন ছাত্র হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। অন্যের থেকে বেশি বেশি জ্ঞান নেয়া উচিত, শেখার আগ্রহ দেখানো উচিত। কারন যারা সারা জীবন এই মন্ত্র মনে রেখে এগিয়ে গেছেন তারাই আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌছেছেন।

কঠোর পরিশ্রম

সফলতা একবারে চলে আসে না। সফলতার জন্য অনেক কিছু দরকার। তার মধ্যে একটি হলো আত্নবিশ্বাস। তবে সফলতার জন্য দরকার প্রচুর প্রচেষ্টা এবং কঠোর পরিশ্রম। কিন্তু এমন অনেক অলস প্রকৃতির মানুষ আছে যারা জীবনে সফলতা তো চাই কিন্তু কোন পরিশ্রম করতে চাই না। চাই যে এমনি এমনি সফলতা আসুক। তাই জন্যই তারা সফলতার মুখ দেখতে পারে না। সাফল্যের ছোয়া পেতে চাইলে কঠোর পরিশ্রম দেয়ার মন মানসিকতা থাকা দরকার। তবেই সাফল্য স্পর্শ করা যাবে।কারন অনেক সময় সাফল্য নষ্ট হয়ে যায় অনেক বড় বড় প্রতিভা এবং অতিরিক্ত পরিশ্রম না করার জন্য। এইজন্য উচিত পরিকল্পনা সম্পন্ন কাজ এবং কঠোর পরিশ্রম করে সফলতা আনার চেষ্টা। তাহলে সফলতা আসতে দেখা যাবে।

চরিত্র

আজ যারা প্রতিষ্ঠিত তারা কিন্তু এমনি এমনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাননি। তাদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে রয়েছে একটি উত্তম চরিত্র। যারা চরিত্রবান তারাই ও সফলতা হয়েছেন এবং তারাই পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে আছেন। প্রবাদে বলা আছে যে, “উত্তম চরিত্র মূল্যবান রত্ন চেয়েও দামি। সফলতা অর্জন করতে আর কিছু নয় শুধুমাত্র চরিত্রের কিছু গুণাবলী আপনার জন্য আপনার জীবনে বয়ে আনতে পারে সুখ, সমৃদ্ধি আর সফলতা। আপনাকে সম্মান জানাতে বাধ্য হবে যদি আপনার চরিত্র সুন্দর ও মধুময় হয় এবং সাথে আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন সেই চরিত্রের দ্বারাই। যেহেতু চরিত্র দ্বারা সফলতা আনা সম্ভববলাই যায় সফলতা এবং চরিত্র একে অপরের পরিপূরক

১০ইতিবাচক মনোভাব

সফলতা আনতে গেলে আর একটা জিনিস মাথায় রাখা অত্যাবশ্যক তা ইতিবাচক মনোভাব। কারন আপনার দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইতিবাচক মনোভাব আপনার সফলতার জন্য খুব দরকার। সমাজ নামক পরিবেশে অনেক ধরনেরই মানুষ থাকে তাই বলে সবার কথায় কান দেয়া যাবে না। যে যেমনই বলুক যদি সেটা আপনাকে ভেঙে দেয়ার জন্য হয় তবে তার কথায় কান না দেয়ায় ভালো। সুখ,সমৃদ্ধি ও সফলতা আনার জন্য ইতিবাচক মনোভাবের দিকে না তাকানোই ভালো। কারন এই সব করলে ভালো কিছু পাওয়া যায়। ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে ভাঙতে সাহায্য করবে নাকি গড়তে। ইতিবাচক কথার দিকে না তাকিয়ে পরিকল্পনা সম্পন্ন একটি সফলতার ছক টেনে সেই দিকে অগ্রসর হওয়া ভালো। দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে লক্ষ্যমাত্রা স্থির যখনই হবে তখনই সফলতা আনা সম্ভব।

পরিশেষে শুধু বলতে চাই যে সফলতা নিজেই আনা সম্ভব যদি নিজের মনে থাকে দৃঢ় বিশ্বাস আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। আবার এমনও করা যেতে যারা সফল হয়েছেন তারা অনেক বইও লিখেগেছেন।যদি মনে হয় তাদের জীবনী থেকে কিছু জানা দরকার তবে অবশ্যই তাদের বইগুলো পড়া উচিত। যেমন, আলীবাবা ডট কম এর নির্মাতা জ্যাক মা এর জীবনী থেকে বলা যায়। তিনি কিন্তু সফলতা এক বারে পান নি অনেক পরিশ্রম করে বারবার শতবার চেষ্টার পরেই পেয়েছিলেন এই সফলতা। নিজে এত বার ব্যর্থ হয়েও কখনো ভাবেন নি যে সে পারবেন না তার লক্ষ্যমাত্রা স্থির রেখে তার ওপ্র পরিকল্পনা চালিয়েই আজ তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। তাই বলব যে, আপনিও নিজের মধ্যে প্রবল ইচ্ছা, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, পরিকল্পনা সম্পন্ন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যান সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।

Start a Conversation

Your email address will not be published. Required fields are marked *